মাস্তুরাতসহ জামাতের ওয়াপেছি হেদায়েতের কথার নমুনা

সাধারনত মাস্তুরাতসহ জামাতের শেষ দিন রাতে অথবা ফিরার দিন সকালে ওয়াপেসি হেদায়াতের কথা হয়ে থাকে। ওয়াপেসি কথা সাধারনত মাস্তুরাতসহ লম্বা সময় লাগানো পুরাতন জিম্মাদার সাথীরা বলে থাকেন। এক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা যদি মোনাসেব হয়ে তাহলে তারই হক বেশি। যদি বাড়িওয়ালা বলতে না পারেন তাহলে পরামর্শক্রমে হালকার কোন জিম্মাদার সাথী দ্বারা আমল করানো যেতে পারে। কখনো পরিস্থিতি যদি এমন হয় হালকার ভেতরও কাউকে পাওয়া গেলো না তাহলে পরামর্শক্রমে জামাতের সাথীদের মধ্য থেকে কেউ একজন কথা বলতে পারবেন। এক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত তরতীবে ওয়াপেছি কথা বলা যেতে পারেঃ

বাড়ী ফেরার সময় এস্তেগফারের মধ্যে ডুবে থাকাঃ

নিজেদের কমজুরির জন্য মাফ চাওয়া। প্রত্যেক নেক আমলের পর এস্তেগফার জরুরী। যেমনঃ নামাজের পড়ে এস্তেগফার করা হয়। নবীজির আগে পিছের গুনাহ মাফ হওয়া সত্বেও দৈনিক একশতবার এস্তেগফার করেছেন।

দিলের মধ্যে ব্যাথা ও কষ্ট নিয়ে যাওয়াঃ

বাচ্চাদের স্কুল ছুটির মত আনন্দ প্রকাশ না করা। বরং নেকি কমে যাওয়ার কারনে কষ্ট অনুভব করা। প্রত্যেকটা আমলের বদলা ৪৯ কোটি গুন করে পেলাম, বাড়িতে গেলে এই নেকি আর হবে না। এরকম কষ্ট দীলের মধ্যে নিয়ে বাড়ির দিকে যাওয়া। এখান থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছি আবার আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার প্রস্তুতির জন্য, এরকম নিয়তে বাড়ির দিকে যাওয়া।

ঘরবাড়ী পরিষ্কার করে যাওয়াঃ

আগে যা ছিল তার চেয়ে ভাল অবস্থায় রেখে যাওয়া। জামাত যদি ঠিকমত বাড়ী ব্যবহার করে বাড়ীওয়ালাতো মাসে দুই জামাত উঠাতে চাইবে। আর যদি বাড়ী নোংরা করে যায় তাহলেতো ৬ মাসেও ১ জামাত উঠাতে চাইবে না।

এস্তেমায়ী ও ব্যক্তিগত সামানা গোছানোঃ

নিজেদের সামানা রেখে না যাওয়া এবং বাড়ীওয়ালার সামানা নিয়ে না যাওয়া। বাড়িওয়ালা ও জামাতের সাথী উভয়ের জন্য এটা অনেক বড় পেরেশানির কারন।

সরাসরি বাড়ী যাওয়াঃ

পথিমধ্যে আত্মীয়স্বজন বাড়ী বা অন্য কোথাও না যাওয়া। আল্লাহর রাস্তায় তিনদিন থাকার কারনে একটা নূর পয়দা হয়েছে। এই নূর নিয়ে আমরা সরাসরি বাড়িতে যাবো। পথিমধ্যে কোনো আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে নেমে এই নূরকে নষ্ট করবো না।

মাস্তুরাতসহ জামাতের ওয়াপেছি হেদায়েতের কথার নমুনা
মাস্তুরাতসহ জামাতের ওয়াপেছি হেদায়েতের কথার নমুনা

মৌমাছির গুন নিয়ে যাওয়া মাছির মত নাঃ

মৌমাছি ফুলে ফুলে বসে এবং মাছি দূৰ্গন্ধময় যায়গায় বসে। মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে আর মাছি জীবানু ছড়ায় । মধু রোগ মুক্তির কারণ আর জীবানু রোগের কারন। তাই আমরা মৌমাছির মতো মানুষের মাঝে ভালাই ছড়াবো। মাছির মতো কারও কষ্টের কারন হবো না। আমরা করল্লার মতো হবো না বরং আখের মতো হবো। করল্লা যেদিক থেকে খায় সেদিক থেকেই তিতা লাগে আর আখ যেদিক থেকে খায় সেদিক থেকেই মিষ্টি লাগে। তেতো কথা বলে মানুষকে কষ্ট দিবো না বরং মিষ্টি কথা বলে সকলের মন জয় করে নেবো।

সবাই সবাইকে মাফ করে দেওয়াঃ

যে অন্যকে মাফ করে দেয় আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করে দেন। আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। এজন্য যারা অন্যকে মাফ করে দেয় আল্লাহপাক তাদেরকে ভালোবাসেন।

দাওয়াতের কাম করার নিয়তে যাওয়াঃ

দাওয়াতের কামকে জীবনের উদ্দেশ্য বানানো। দুনিয়া জরুরত মনে করে করা। অর্থাৎ শত ব্যস্ততার মধ্যেও দাওয়াতের কামকে প্রাধান্য দেওয়া।

বাড়ীতে যাওয়ার পর যারা দেখতে আসবে তাদেরকে কার্গোজারী শুনানোঃ

কষ্টের কথা না বলা । ভাল দিকগুলো বিস্তারিতভাবে বলা। কষ্টের কথা শুনলে নতুনরা এই মেহনত করার হিম্মত হারিয়ে ফেলবে। আর এতোদিন আমল না করে যে ভুল করেছি এ ধরনের কথা বললে তার মধ্যে আফছোছ পয়দা হবে এবং এই মেহনত করার আগ্রহ দেখাবে।

বাড়ীতে গিয়ে ৩ কামে লেগে থাকাঃ

(১) ঘরের তালিম

ঘরের তালিমের ফাযায়েল বলা এবং প্রতিদিন যেন ঘরে তালিম করে এর তাকিদ দেওয়া। যদি জাহেলের ঘরে তালিম হয় তাহলে সেই ঘর থেকে আল্লাহপাক তালিমের বরকতে আলেম পয়দা করে দেন। আর যদি আলেমের ঘরে তালিম না হয় সেই ঘর থেকে ভবিষ্যতে জাহেল পয়দা হয়।

(২) এস্তেমায়ী তালিম

মাস্তুরাতের জন্য এস্তেমায়ী তালিম হলো শবগোজারীর বদল। পুরুষরা যেমন প্রতি বৃহস্পতিবার মার্কাজে একত্রিত হয়ে আমলী পরিবেশে রাত কাটায় মা-বোনদের জন্য এস্তেমায়ী তালিমে শরীক হওয়া ঐ রকম গুরুত্ব রাখে।

(৩) খুরুজ

তরতীব অনুযায়ী সময় লাগানো। অর্থাৎ ২ মাস পর পর প্রতি ৩য় মাসে ৩ দিন সময় লাগানো, ৩ দিন ৩ বার হয়ে গেলে ১০ দিন লাগানো, ১০ দিন হয়ে গেলে চিল্লা লাগানো আর চিল্লা হয়ে গেলে বিদেশের জন্য ফিকির করা।

চার শ্রেণির উপর মেহনত করাঃ

(১) নিজের জাতের উপর

ফরজ নামাজ, নফল নামাজ, তোলাওয়াত, তাসবিহাত ও দুয়ার এহতেমাম করা। জামাতে থাকা অবস্থায় এই আমলগুলো সময়মত করা খুব সহজ। বাড়ীতে যাওয়ার পর আখেরাতকে সামনে রেখে নিজের গরজে আল্লাহর রাজীর জন্য এই আমলগুলো করতে থাকা ।

(২) মাহরামের উপর

নবী ও সাহাবীদের বিবিদের দ্বীনের কাজে সহযোগিতার ঘটনা বলা। খাদীজা (রা.) যেমন জান-মাল দিয়ে নবীজিকে সহযোগিতা করেছেন ঐরকম আমাদের মা-বোনদের কাছ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে।

(৩) বাচ্চাদের উপর

বাচ্চাদের তালিম তরবীয়তের ব্যাপারে কিছু ঘটনা বলা। বাচ্চাদের সামনে ঝগড়া না করা। বাপ-মা একে অপরের অসাক্ষাতে প্রশংসা করা। বিয়ের আগে মেয়েকে তিন কাম শিখিয়ে দেওয়া- (ক) দ্বীন, (খ) হাতের কাম, (গ) খেদমত।

(৪) এলাকার মাস্তুরাতের উপর

এজন্য লেনদেন, মোয়ামেলাত, মোয়াশেরাত (সামাজিক আচরন) ও আখলাক (চরিত্র) সুন্দর করা। আমার লেনদেন যেন সাফ থাকে। আমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনের প্রতিটি কাজ যেন সুন্নত তরীকায় হয়। আর নত হয়ে চলার অভ্যাস করা। অহংকার যেন প্রকাশ না পায়। প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক কায়েম করা। গরীব, এতিম, অসহায়দের একরাম করা । ইসলাম হলো মানুষকে খানা খাওয়ানো এবং মিঠা মিঠা কথা বলা ।

ঘরে জামাত উঠানোঃ

যে ঘরে জামাত উঠবে ঐ ঘরে দ্বীনদারী পরিবেশ কায়েম হবে। হালিমা সাদিয়া (রাঃ) হুজুর (স.) কে কোলে নেওয়ার সাথে সাথে বরকত জারি হয়ে যায়। ঘরে জামাত নিলে ঐরকম বরকত জারী হবে ইন শা আল্লাহ ।

জামাতের নুসরতঃ

জামাতের নুসরত করলে আনসারদের দুয়ার মধ্যে শামিল হবে। মহল্লায় জামাত আসলে কমপক্ষে ১ বেলা মেহমানদারী করার চেষ্টা করা। রান্নার সময় বাচ্চাদেরকেও কাজে লাগানো। হাদীসে এসেছে, "যে ব্যক্তি কিয়ামতের উপর এবং আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের একরাম করে।"

ঘরে চার পরিবেশ কায়েম করাঃ

(১) মসজিদ

যখন ঘরে বেশী বেশী নামাজ পড়া হবে ঐ ঘরটা তখন মসজিদের পরিচয় বহন করবে। যাদের ঘরে অতিরিক্ত রুম আছে তারা একটা রুমকে নামাযের রুম বানিয়ে নিবেন। সেখানে থাকবে কুরআন, তাজবিহ, জায়নামাজ, নামাযের সময়সূচীওয়ালা ঘড়ি। সেই রুমটা হবে ঘরের মসজিদ। যদি সম্ভব হয় বাথরুমে অযু না করে অযুর জন্যও আলাদা একটা জায়গা বানিয়ে নিবো। আর যাদের বাড়িতে পর্যাপ্ত কামড়া নেই তারা একটা রুমের নির্দিষ্ট কোনায় নামাযের জন্য আলাদা জায়গা বানিয়ে নিবো। এই নামায ঘরে মহিলারা আওয়াল ওয়াক্তে নামায পড়ে নিবে। আর পুরুষরা সুন্নত ও নফল নামায পড়বেন, ফরয নামায মসজিদে গিয়ে আদায় করবেন।

(২) মাদ্রাসা

ঘরে যখন বাচ্চাদের দ্বীনি তালিম তরবীয়ত চলবে ঐ ঘরটা তখন মাদ্রাসার পরিচয় বহন করবে। বাচ্চাদের প্রথম মাদ্রাসা হলো তার মায়ের কোল। মা যদি খাদিজা রাঃ এর মতো হয় তাহলে সন্তান হবে ফাতিমা রাঃ এর মতো। আর মা যদি ফাতিমা রাঃ এর মতো হয় তাহলে সন্তান হবে হাসান ও হুসাইন রাঃ এর মতো।

(৩) খানকা

ঘরে যখন আল্লাহ আল্লাহ যিকির, তেলাওয়াত হবে ঐ ঘরটা তখন খানকার পরিচয় বহন করবে। জিকিরের দ্বারা আল্লাহপাকের নূর বর্ষিত হয়। যে নূরের কারনে আসমানবাসীরাও ঐ ঘরকে চমকাইতে দেখে। তিলওয়াতের দ্বারা আল্লাহপাকের খাস রহমত ও বরকত নাযিল হয় ঐ ঘরে।

(৪) মার্কাজ।

ঘরে যখন জামাত আসবে, ঘর থেকে জামাত বাইরে যাবে এবং ঘর থেকে দ্বীনের তাকাজা পুরা করা হবে ঐ ঘরটা তখন মার্কাজের পরিচয় বহন করবে। মোট কথা ঘরটা আমল দ্বারা সাজানোর ফিকির করা।

মাহরামের এতায়াত করাঃ

এতায়াত মানে মেনে চলা। একজন মাস্তুরাত কখনো বাপ, কখনো ভাই, কখনো স্বামী এবং কখনো ছেলের জিম্মায় থাকে। অর্থাৎ যার জিম্মায় থাকুক না কেন তাকে মেনে চলা। একজন মাস্তুরাত এই চারজন পুরুষকে চাইলে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারবে তার বদ আমলের দ্বারা। তাই আমার জিন্দেগিকে আমি এমন বানাবো যাতে আমার কারনে আমার মাহরামকে জাহান্নামে যেতে না হয়। বরং এমনভাবে মেহনত করবো যাতে আমি আরও অন্যের নাজাতের উসিলা হতে পারি। এর দ্বারা দুনিয়া আখেরাতে সম্মানীতা হবো ইন শা ল্লাহ।

*** দোয়া শেষে মুসাফাহা করা। ***
Next Post Previous Post