নতুন সাথীদের জন্য তারুফি বয়ান - কথা বলুন নিশ্চিন্তে!
তারুফি বয়ান বা হিজরত নুসরতের কথা প্রতি মসজিদে যাওয়ার পর প্রথম যে নামায সামনে আসে সেই নামাযের পরেই বলতে হয়। অধিকাংশ জামাত যেহেতু সকালে মসজিদ পরিবর্তন করে তাই তারুফি বয়ান সাধারণত যোহর নামাযের পরেই হয়ে থাকে। ফরয নামাযের পর একজন সাথী দাঁড়িয়ে তারুফি এলান দেয়। তারপর সুন্নত নামায শেষ হলে মহল্লার সাথীরা ও জামাতের সাথীরা গোল হয়ে বসে যায়, যে সাথীর ফয়সালা থাকে তিনি দাড়িয়ে তারূফি কথা বলতে থাকেন। এক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষ করা যায় যে এক চিল্লার সফরে মসজিদ লাগে সাধারনত ১৩ টি। ধরা যাক জামাতের সাথী হলো ১৮ জন। ১৩ মসজিদে যদি ১৩ জন সাথী হিজরত নুসরতের কথা বলে থাকে তাহলে চিল্লা শেষ হয়ে গেলেও বাকি ৫ জন সাথী এই আমলটি করতেই পারে না। এখন ধরা যাক আ: রহিম ভাইও এই পাচ জনের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি এলাকায় ফিরে আসার কয়েকদিন পর মহল্লা থেকে তিন দিনের জামাত বের হয়েছে। আ: রহিম ভাইও সাথে যাচ্ছেন। মাশোয়ারার ভিতর আমির সাহেব ফয়সালা করেছেন আঃ রহিম ভাই তারুফি বয়ান করবেন যেহেতু তিনি নগদ চিল্লা দিয়ে আসলেন। এদিকে আঃ রহিম ভাইয়েরতো ঘাম ছুটার অবস্থা তিনি চিল্লার সফরে একদিনওতো এই আমল করেননি। এই আঃ রহিম ভাইয়ের মতো যারা বিপদে পড়েছেন তাদের জন্য তারুফি বয়ানটি pdf সহ দেওয়া আছে, আশা করি কাজে লাগবে ইন শা আল্লাহ।
তারুফী কথাঃ
তারুফি কথার শুরুতে আল্লাহপাকের প্রশংসা ও নবীজীর উপর দরূদ পড়ে নিবো। তারপর সামনে মহল্লার সাথী ভাই যারা বসে আছে তাদের দিকে মুখ করে হাসি মুখে কথা বলা শুরু করবো। অনেকেই আছে ভয়ে উপরের দিকে বা অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে বয়ানও একটি দাওয়াত। দাওয়াতের তাছির তখনই হবে যখন কারও চোখে চোখ রেখে কথা বলা হয়।
আলহামদুলিল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি যুগে যুগে পৃথিবীতে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন কেবল এই এক উদ্দেশ্যে—মানবজাতিকে হেদায়াতের রাস্তা দেখানো, রবুবিয়াতের দিকে ডাকা এবং দুনিয়ার জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করা।
নতুন সাথীদের জন্য তারুফি বয়ান - কথা বলুন নিশ্চিন্তে! |
আল্লাহ তায়ালা দ্বীনকে দুনিয়ায় জিন্দা করেছেন হিজরত ও নুসরতের মাধ্যমে। হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তায়েফে হিজরত করলেন তখন সেখানকার দুর্ভাগা লোকেরা তাঁকে কেবল প্রত্যাখ্যানই করেনি, বরং কঠিন নির্যাতনের মাধ্যমে তাড়িয়ে দেয়। তাই সেখান থেকে দ্বীন জিন্দা হয়নি। আবার সাহাবায়ে কেরাম যখন আবিসিনিয়ায় হিজরত করলেন, সেখানকার বাদশাহ দুনিয়াবি লাইনে সর্বপ্রকার সহযোগিতা করলেও দ্বীনি নুসরত করেননি। ফলে সেখান থেকেও দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
কিন্তু যখন নবীজি মদীনায় হিজরত করলেন, তখন মদীনাবাসীরা তাঁকে দ্বীনি ও দুনিয়াবি উভয় দিক থেকে পূর্ণ সহযোগিতা করলেন। আর আল্লাহ তায়ালা সেখান থেকেই গোটা পৃথিবীতে দ্বীনের আলো ছড়িয়ে দিলেন। মদীনা হয়ে উঠলো দাওয়াত ও তাবলীগের মার্কায, আনসার মুহাজিরের মিলনস্থল। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আনসারদের সম্পর্কে বলেন, "তারা আমার জামার ভেতরের অংশ আর মুহাজিরগণ বাহিরের অংশ।" এমনকি তিনি বলেছিলেন, "সবাই যদি এক পথে চলে আর আনসারগণ যদি অন্য পথে চলে, তবে আমি চাইবো আমি যেন আনসারদের পথেই চলি।"
মেরে ভাইও দোস্ত বুজুর্গ! দ্বীনের দাওয়াতের কাজ হলো নবীদের কাজ। এই কাজের মাধ্যমেই আল্লাহর নিকট প্রিয় হওয়া যায়, জান্নাতের রাস্তায় চলা যায়। নবীজি বিদায় হজ্বে সাহাবীদের বলেছিলেন: "তোমরা যারা এখানে আছো তারা যেন আমার দাওয়াত তাদের কাছে পৌঁছে দাও যারা এখানে উপস্থিত নেই।" আর আমরা জানি, সাহাবায়ে কেরামের জীবনে এই দাওয়াত কীভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিল কেউ চাষাবাদ ছেড়ে, কেউ ব্যবসা, কেউ সর্দারি, কেউ ঘর-সংসার ছেড়ে দুনিয়ার কোনায় কোনায় ঘুরে বেড়িয়েছেন একটাই কাজ নিয়ে: "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"'র দাওয়াত।
দাওয়াত থাকবে তো দ্বীন থাকবে, দ্বীন থাকবে তো দুনিয়া থাকবে। দাওয়াত না থাকলে দ্বীন থাকবে না, আর দ্বীন না থাকলে দুনিয়াও থাকবে না। মাছ যেমন পানিতে শান্তি পায়, তেমনি বান্দা দ্বীনের মধ্যে শান্তি পায়। সেই জন্য আজ আমরা কিছু সময়ের জন্য আপনাদের মহল্লায় হিজরত করে এসেছি। আপনারা আমাদেরকে শুধু দ্বীনি লাইনে নুসরত করুন আমরা দুনিয়ার আসবাব-সামান সবকিছু সংগে এনেছি।
যেমন সাহাবীদের মাঝে ছিল উলামা, ব্যবসায়ী, কৃষক, চাকুরিজীবি, এমনকি দাস পর্যন্ত— তেমনি আমাদের জামাতেও আছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র, শ্রমজীবী, ব্যবসায়ী, মাদ্রাসার উস্তাদ ও ত্বোলাবা। এই জামাত আপনাদের মহল্লায় এসেছে, আপনারা নুসরত করলে ইন শা আল্লাহ এখান থেকেও আল্লাহ দ্বীনকে জিন্দা করবেন, মহল্লার পরিবেশ বদলে দেবেন, আপনাদেরকেও দুনিয়া-আখিরাতে দামি বানিয়ে দেবেন।
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরতকারী ও নুসরতকারী উভয়কেই দোয়া করেছেন বিশেষ করে আনসারদের জন্য বেশি দুয়া করেছেন। তিনি বলেছেন, “হে আল্লাহ! আপনি আনসারদের মাফ করুন, তাদের সন্তানদের মাফ করুন, এমনকি তাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও মাফ করুন।”
তো বলুন ভাই, কে কে আছেন আমাদের সাথে তিন দিন সময় দিতে, বেডিং সহ আমাদের সাথে থাকবেন?
আপনারা শুধু সময় দিন, আমরা মেহনত করবো।
পাখি যেমন এক ডানা দিয়ে উড়তে পারে না, সাইকেল যেমন এক চাকা দিয়ে চলতে পারে না ঠিক তেমনি হিজরত এবং নুসরত ছাড়া দ্বীন জিন্দা হয় না।
তাই, আমরা যেহেতু হিজরত করেছি, আপনারা নুসরত করুন ইন শা আল্লাহ এই মহল্লা থেকেও দ্বীন চমকাবে!
কে কে প্রস্তুত আছেন, বলেন ভাই?
হিজরত নুসরতের কথা - কিছু সাবধানতাঃ
হিজরত নুসরতের কথা বা তারুফি কথা বলার সময় অনেকেই এর মধ্যে গাস্তের আদব ঢুকিয়ে ফেলেন আবার গাস্তের আদবে তারুফি কথা বলে ফেলেন। এক্ষেত্রে কথা বলার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তারুফি কথায় এখানে যা লেখা আছে তার চেয়ে অবশ্যই আপনি বাড়িয়ে বলতে পারবেন। সেক্ষেত্রে দাওয়াতের গুরুত্ত্ব সম্পর্কে আপনাকে তুলে ধরতে হবে। হিজরত ও নুসরত উভয়টা ছাড়া কিভাবে দ্বীন জিন্দা অসম্ভব সেই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি হায়াতুস সাহাবাহ কিতাবে অনেক ঘটনা পাবেন সেখান থেকে বলতে পারেন। আর একটা কথা ভূলেও কখনো বলা যাবে না। সেটা হলো, অনেকেই বলে সাহাবীদের যাদের দুইটা বিবি ছিলো তারা একটা বিবিকে তালাক দিয়ে মুহাজির ভাইদেরকে দিয়ে দিতো। ঘটনা সত্য হলেও এই কথা তারুফি কথায় বলা যাবে না। এতে করে মহল্লার নতুন অনেক সাথী বসা থাকে তারা মাইন্ড করতে পারে। এটা খুবই খেয়াল রাখবো।
তারুফি এলানঃ
আলহামদুলিল্লাহ, মোবারক দ্বীনের মেহনত নিয়ে এক জামাত আপনাদের মহল্লায় উপস্থিত। বাকী নামাযের পরে মহল্লাবাসীদের সাথে জরুরী পরামর্শ হবে। আমরা সবাই বসি, বসলে বহুত ফায়দা হবে- ইন শা আল্লাহ্।
নোটঃ তারুফি এলানের ক্ষেত্রে একটা ভূল প্রায় সব সাথীরাই করে থাকি। আমরা বলে থাকি দ্বীনের মোবারক মেহনত নিয়ে এক জামাত এসেছে। আসলে এখানে মেহনত মোবারক হবে না বরং আল্লাহপাকের দ্বীন হলো মোবারক। সুতরাং বলতে হবে মোবারক দ্বীনের মেহনত নিয়ে এক জামাত এসেছে। এলান দেওয়ার সময় এই বিষয়টা বিশেষভাবে খেয়াল করবো।