মাস্তুরাতসহ জামাতের হেদায়েতের কথার নমুনা
মাস্তুরাত জামাতের হেদায়েতের কথা শুরুর আগে জামাত বন্দির ফরমের সাথে সাথী মিলিয়ে দেখা। বিষয়টি অত্যন্ত জরুরী। মাইক সেট, এস্তেমায়ী সামানা, ২ সেট কিতাব, অতিরিক্ত চাদর, ক্লিপ, রশি আছে কিনা তাহকিক করা। এস্তেমায়ী সামানা ২ সেট হলে ভালো হয়। বিশেষ করে থালা, গ্লাস ও দস্তর খানা পৃথক হওয়া চাই।
আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার শর্ত ও উসুলঃ
১। সফরে শরয়ী মাহরাম থাকা চাই। উত্তম মাহরাম হলো স্বামী।
২। এহরাম অবস্থায় থাকা। হজের সফরে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে যেমন দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয় ঠিক একই ভাবে থাকা।
৩। সুন্নতী লেবাস, নেকাবওয়ালা বোরকা হওয়া চাই, হাত-পায়ের নখেরও পর্দা করা, জামাতে ভারী গহনা ও দামী পোশাক ব্যবহার না করা।
৪। বাচ্চা সাথে না নেওয়া।
৫। পার্ট পাইম না লাগানো। কোন কারনে যদি পুরুষের কোনো কাজে আসতে হয় তাহলে মাস্তুরাতসহ একবারে চলে আসবেন।
৬। ভারী বয়স্কা ও সবসময় অসুস্থ থাকে এমন মাস্তুরাত না নেওয়া।
৭। মাস্তুরাতের কথা মসজিদে এলান না দেওয়া। তবে প্রত্যেক আমলের পর বলে দেওয়া যে অমুক ভাইয়ের বাড়িতে আমাদের মাস্তুরাত আছে।
৮। প্রয়োজন ছাড়া রাতে দেখা না করা।
৯। প্রয়োজনে বাড়ীতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করা। সিড়িঘরের নিচে থেকে হলেও পাহাড়া দিতে হবে যদি প্রয়োজন পড়ে।
১০। জামাতের জিম্মাদার একজনই হবে। এমন না যে জিম্মাদারে স্ত্রী মাস্তুরাতদের মধ্যে জিম্মাদার! পুরুষ মাস্তুরাত সবার জন্য একজনই জিম্মাদার।
আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার ফযিলত বলাঃ
![]() |
মাস্তুরাতের হেদায়েতের কথা |
আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার উদ্দেশ্য (সংক্ষেপে ৬ নম্বর বলা)
বার কামের মোজাকারাঃ
৪ কাম কম করা এর মধ্যে ১টি হলো মসজিদের বাহিরে কম সময় লাগানো । মা-বোনদের থাকার জন্য যে কামড়াটা দেওয়া হয়েছে সেটাই হলো তাদের মসজিদ। জরুরত ছাড়া কামড়ার বাইরে না যাওয়া।
বারো কাজের বিস্তারিত মোজাকারা এখান থেকে পড়ে নিন।
ইনফেরাদী ও এস্তেমায়ী আমলে জুড়ার তরগীবঃ
এজতেমায়ি আমল সমুদ্র বরাবর আর ইনফেরাদি আমল সমুদ্রের এক ফোটা পানি বরাবর। ইনফেরাদী ও এস্তেমায়ী আমলগুলো খুলে খুলে বলা এবং পার্থক্য ও গুরুত্ব বুঝানো। যাতে করে মাস্তুরাতদের মধ্যে ইজতেমায়ি আমলের আগ্রহ পয়দা হয়।
সফরের আদবঃ
মাস্তুরাত যে গাড়ীতে উঠবে মাহরাম ঐ গাড়ীতেই উঠবে। গাড়ীতে উঠা নামার সময় নিজ নিজ আহলিয়াকে ডাকা যেমন আহঃ আঃ মালেক। আমীর সাব সবার আহলিয়াকে ডাকবে এমন না। চোখ ঢাকা থাকার কারণে হোচট খেতে পারে এজন্য মাস্তুরাতদের হাত ধরে উঠানো এবং হাত ধরে নামানো। মাস্তুরাতদের গাড়িতে উঠা নামার সময় সব ড্রাইভারদেরকে একপাশে নিয়ে দাওয়াত দেওয়া। সফরে দাওয়াতের মওকা না থাকলে জিকির করা । মা-বোনদের কন্ঠেরও পর্দা করা চাই। কোনো প্রয়োজন থাকলে তার মাহরামের কানে ফিসফিস আওয়াজে কথা বলবে।
বাসা দেখা ও মঞ্জিলঃ
ঢুকার আগে আবার বাসা দেখে নেওয়া। যিনি বাসা দেখবেন তার মাস্তুরাত নিয়ে প্রথমে ঢুকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলে ভাল হয়। মঞ্জিলের সময় মাস্তুরাতকে দাঁড়িয়ে না রাখা। দোয়ায় শরীক হওয়া মাস্তুরাতের জন্য জরুরী না। শরীক হলেও হাত না তুলা। শুধু আমিন বলা।
মাস্তুরাতগনের বাসায় ঢুকে করনীয়ঃ
পুরুষ লোক আছে কিনা নিশ্চিত না হয়ে নেকাব না খোলা। পরিচয় দেওয়া নেওয়া। পরিচয় দেওয়ার সময় আছমা, খাদিজা, ছালমা না বলে আহলিয়া অমুক, বিনতে অমুক বা উম্মে অমুক বলা। অগ্রিম কোন কথা না বলা। অর্থাৎ আপনি কি বাড়ীওয়ালী, উনি কি আপনার ছেলের বউ, সে কি কাজের বুয়া এরকম না বলা। নিজেদের ছামানা হেফাজত করা। বিশেষ করে হাতমোজা, পা মোজা, বোরকা সবার কালো রং হওয়ার কারণে বদল হতে পারে এজন্য ব্যাগে ভরে রাখা।
পর্চা তৈয়ারি ও আমির মানাঃ
মাস্তুরাত এবং পুরুষ সবার জন্য আমীর মানা জরুরী। যে আমীরকে মানল সে নবীকে মানল আর যে নবীকে মানল সে আল্লাহকে মানল। মা বোনদের জন্য পর্চাই হলো তার আমীর। অর্থাৎ পর্চায় যেভাবে আমল লেখা আছে আমানতদারির সাথে তা পালন করা। প্রথম দিন সময় কম থাকলে একজনকে তালিমের জিম্মাদারী দেওয়া। তালিমের ৩০মিনিট আগে জামাতের মা-বোনেরা মশ্ক করে নিবে। মশকের সময় এলাকার মা-বোন চলে আসলে তাকে পড়তে না বলা। আর যদি নিজে থেকে পড়ে তার ভুল না ধরা।
এস্তেকবালঃ
পর্দার মধ্যে থেকে হাসিমুখে এস্তেকবাল করা। এলাকার মা-বোন যেভাবেই আসুক না কেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করা।
তালিমঃ
সকালে ফাযায়েলে আমল এবং বিকালে ফাযায়েলে ছাদাকাত থেকে পড়া। তালিম শুরুর আগে মাঝে মাঝে তালিমের মৌজু অর্থাৎ আদব, উদ্দেশ্য, লাভ বলা । নীচু জায়গায় বসে তালিম করা।
৬ গুনের আলোচনাঃ
যে ৩০ মিনিট সহজ ভাষায় ৬ গুনের উপর কথা বলতে পারে তাকে জিম্মাদারী দেওয়া।
তাশকিলঃ
তাশকিলের সময় জামাতের সকল মা-বোন কথা বলতে পারে। তবে নাম লেখানোর ব্যাপারে জোড়াজুড়ি না করা।
জরুরত থেকে ফারেগ হওয়াঃ
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামায খানা ও অন্যান্য জরুরত থেকে ফারেগ হওয়া।
বিকালের তালিমঃ
কোন কারনে খানার দেরী হলেও নির্ধারিত সময়ে তালিম শুরু করা। ৩০ মিনিট তালিম চলার পর পুরুষদের পক্ষ থেকে বয়ান হবে।
পুরুষদের পক্ষ থেকে বয়ানঃ
৬ নম্বরের উপর কথা বলা। বাচ্চাদের দ্বীনি তরবীয়ত, ঘরের তালিম, সাদেকী জিন্দেগীর উপরও কথা বলা যেতে পারে। হাসি-ঠাট্টা, অতিরিক্ত কান্না বা লজ্জাজনক কথা বয়ানে না বলা।
তাশকিলঃ
মাস্তুরাতসহ নগদ জামাতের তরগীব দেওয়া। তবে জোড়াজুড়ি না করা। এছাড়া ঘরের তালিম ও মাহরাম পুরুষদের আল্লাহর রাস্তায় বের করারও তাশকিল হবে।
আছরবাদঃ
আছরের পরও যদি এলাকার মা-বোন থাকে তাদেরকে ইনফেরাদী দাওয়াত দেওয়া। এরপর নিজেদের জাতি আমল পুরা করা যেমন তিন তাজবিহাত ও অন্যান্য জিকির।
বাদ মাগরিব ইনফেরাদী আমল ও মোজাকারাঃ
মাগরিবের পর ইনফেরাদী আমল বলতে আওয়াবীন পড়া ও কোরআন তেলাওয়াত পুরা করা। যারা পড়তে পারে না তারা উচ্চারন সহী আছে এমন মাস্তুরাতের কাছে শিখবে।
মোজাকারাঃ
ফজর বাদ পুরুষদের পক্ষ থেকে যে বিষয়ে মোজাকারা হয়েছে ঐ বিষয়ে মা-বোনেরা আপোষে বাদ মাগরিব ইনফেরাদি আমলের শেষে মোজাকারা করে নিবে। সাথে অযু, গোসল, তায়াম্মুম, দায়েমি সুন্নত ফরয ইত্যাদি আমলের মোজাকারাও করে নিবে।
এশা বাদঃ
ইনফেরাদী আমল শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া। যত দ্রুত বাতি নিভানো হবে তাহাজ্জুদের সময় উঠা ততটাই সহজ হবে।
ফজর বাদঃ
ইনফেরাদী আমল শেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন-পুরাতন মিলে আপোষে ৬ নম্বর শেখা শেখানো। যাতে করে প্রত্যেকটা মা বোনের মধ্যে কমপক্ষে আধা ঘন্টা কথা বলার যোগ্যতা পয়দা হয়ে যায়।
পুরুষদের পক্ষ থেকে মোজাকারাঃ
বড়দের পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিষয়গুলো মোজাকারা করা। যেমন আলমী ফিকির, দাওয়াতের আদব-লাভ, জিকির-তেলওয়াত, ছবর-ধৈর্য, আপোষে জোড়মিল, বাচ্চাদের তরবিয়ত ইত্যাদি বিষয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট মোজাকারা করা।
খেদমতের তরতীব ও তরগীবঃ
খানা মাস্তুরাতরা পাকাবে। প্রয়োজনে পুরুষরা পাকাতে পারে। তবে যে মাস্তুরাতকে খেদমতের জিম্মাদারী দেওয়া হয় সে যেন জিম্মাদারী আদায় করতে আগ্রহী হয় এজন্য খেদমতের ফাযায়েল বলা।
ঘরওয়ালাদের সদস্য কম থাকলে খানা একসাথে হতে পারে। আর সদস্য বেশী থাকলে খানা আলাদা হওয়া মোনাসেব। ঘরওয়ালাদের কাছ থেকে নগদ কোন টাকা না নেওয়া।
মোলাকাতের উত্তম সময় হলো মাগরিবের পূর্ব মুহুর্ত। ২ জন করে সাথী যাওয়া। মোলাকাতের সময় যেন দরজা-জানালা বন্ধ থাকে। মোলাকাতও একটি আমল অবহেলা না করা।
মেহমানদারী ও হাদীয়া কবুলের তরতীবঃ
মাস্তুরাতগন কোন মেহমানদারী বা হাদীয়া কবুল করবে না। যদি কোন মাস্তুরাত হাদিয়া সরাসরি ভিতরে নিয়ে যায় তা মসজিদে পাঠানো। আমীর সাহেব মোনাসেব মনে করলে সাথীদের রায় নিয়ে কবুল করতে পারেন।
প্রত্যেক আমলের শেষে মাস্তুরাতের অবস্থান ও আমলের সময় বলে দেওয়া। যেমন অমুক ভাইয়ের বাড়িতে আমাদের মাস্তুরাতরা আছে এবং অমুক অমুক সময়ে এই এই আমল হবে। এছাড়া ঘর ঘর মোলাকাতের সময়ও পুরুষের মাধ্যমে দাওয়াত পৌঁছানো।
হালের তাকাজা পেশ করাঃ
হালের কোন তাকাজা থাকলে পেশ করা। যেমন জোড়, ইজতিমা ইত্যাদি।
*** দোয়া শেষে মুসাফাহা করা। ***
বিঃ দ্রঃ মাস্তুরাতের হেদায়েতের কথার যে পয়েন্টগুলো এখানে আলোচনা করা হয়েছে তার বিস্তারিত আলোচনা এই আর্টিকেলে আছে। পড়ে নেওয়ার অনুরোধ থাকলো।
মাস্তুরাতসহ ওয়াপেসি হেদায়েতের কথা কিভাবে বলতে হয় তার নমুনা এখান থেকে দেখে আস্তে পারেন।