ত্রি মাসিক মাশওয়ারার ফায়সালা সমূহ এপ্রিল ২০২৫

তারিখঃ ০৫/০৪/২০২৫
বিসমিহি তা'য়ালা

১. ফারেগীন ওলামাদের সালে বের করার মেহনতঃ

তাবলীগের কাজ অতি সহজ, তবে তা মেহনত করার উপর নির্ভর করে। এজন্য প্রত্যেক জেলার থানা, ইউনিয়ন ও মহল্লার সাথীদের জিম্মাদারী দেওয়া যেন তারা ফারেগীন ওলামা (যারা এখনো কোন কাজে মশগুল হননি) তাদের তালাশ করে লিস্ট বানিয়ে তাদের অভিভাবকের সাথে দেখা করে জেহেন বানিয়ে, প্রয়োজনে তাদের বিভিন্ন মাসায়েল হাল করে সালে বের করার চেষ্টা করা। এই ফিকিরটা জেলাওয়ালারা অন্যান্য তাকাজার মত গুরুত্বের সাথে নেওয়া। উল্লেখ্য যে, যারা সদ্য সাল লাগিয়ে এলাকায় ফেরত গিয়েছেন, তাদের কাজে জুড়ানোর জন্য উনার আশেপাশের পুরানা সাথীদের মোতায়াজ্জুহ করা যাতে উনাদের বিভিন্ন তাকাজায় ব্যবহার করা।

২. ওলামা হাযরাতগণের বিভাগীয় জোড়ঃ

বিভাগীয় জোড়ের উদ্দেশ্য হল মাদ্রাসার মুহতামিম, নায়েবে মুহতামিম, নাজেমে তালিমাত ইত্যাদি হাযরতাদের দাওয়াতের কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করিয়ে মাদ্রাসায় মেহনতের রাস্তা খোলা, এরপর সারা বছর মাদ্রাসায় মেহনত করা

৩. বছরের শুরু থেকে মাদ্রাসার মেহনতঃ

হযরতজী মাওলানা ইলিয়াস সাহেব (রহঃ) বলেছেন- ওলামায়ে কেরামগণ দ্বীনি কাজে মশগুল থাকেন আর তোমরা দুনিয়াবী কাজে মশগুল থাকো । তোমরা দুনিয়াবী কাজ হতে সময় ফারেগ করতে পারো না আর উনারা কিভাবে দ্বীনি কাজ থেকে সময় ফারেগ করবেন। হযরতজী (রহঃ) বলতেন- ওলামায়ে কেরামদের তায়ীদকে এহসান মনে করা। তাই বছরের শুরু থেকে জেলার কম-বেশী ওয়াক্ত লাগানো ও কিবারে ওলামায়ে কেরামদের দিয়ে জামাত বানিয়ে মাদ্রাসার মেহনতের এহতেমাম করা। এজন্য কাকরাইলের জামাতের অপেক্ষা না করে সারা বছর এই মেহনতকে জারী রাখা, এটাই বেশী ফলপ্রসু হবে।

৪. বাহির মূলকের জন্য পাঁচ মাসের জামাত বানানোঃ

হজরতজী মাওলানা এনামুল হাসান সাহেব (রহঃ) ফরমান, আমরা যত বিদেশে জামাত পাঠাবো বিদেশ থেকে তত বেশী জামাত আমাদের দেশে আসবে। তাই পুরানাদের পাঁচ দিনের জোড় ও ইজতেমার মওকায় যেসমস্ত জামাত ছোয়াদ হয়েছে তাদের নিকট গিয়ে গাশত করে বিভিন্ন মাসায়েলকে হাল করে, প্রয়োজনে সামানা বিক্রয় ও করজে হাসানার ব্যবস্থা করে আখিরাতের কামাই মনে করে কাকরাইলে পাঠানোর এহতেমাম করা বহুতি জরুরী। কমছে কম আগামী ত্রি মাসিক মাশওয়ারায় নিয়ে এসে আল্লাহ পাকের রাস্তায় বের করার চেষ্টা করা।

৫. জেলার সকল কামকরনেওয়ালা সাথীদের জিন্দেগীর (খুরুজের) তরতীব করাঃ

দেশের কামকে আগে বাড়ানোর জন্য সকল কামকরনেওয়ালা সাথীদের জিন্দেগীর তরতীবের (সালানা, মাহানা ও রোজানা) মধ্যে আনা অত্যন্ত জরুরী। তাই পরবর্তী ২৪ ঘন্টার জোড়ে এর তরগীব দেওয়া ও মসজিদওয়ার জামাতের মাধ্যমে সকল সাথীদের সালানা ও মাহানা খুরুজের তরতীব করা এবং আজাইমকৃত সাথীদের নির্দিষ্ট সময়ে উসুল করে জামাত বানিয়ে আল্লাহ পাকের রাস্তায় বের করার কোশেষ করা।

৬. জেলার সকল মসজিদে মোকামী কাম জিন্দা করার মেহনতঃ

জেলার সকল জিম্মাদার সাথীরা নিজ নিজ মসজিদে এহতেমামের সাথে সময় দেয় ও পাঁচ কাজ করে। হালকার মাসিক লম্বা মাশওয়ারার মাধ্যমে দূর্বল মসজিদকে চিহ্নিত করে এক এক সবল মসজিদকে দূর্বল মসজিদের কাম উঠানোর দায়িত্ব দেওয়া। তাছাড়া প্রত্যেক মসজিদে কামকরনেওয়ালা সাথী আপোষে মাশওয়ারা করে ২ জন করে জোড়া বানিয়ে ২৭ দিন মেহনত করে নিজের কামাই মনে করে নতুন সাথীদেরকে নিয়ে ৩ দিন সময় লাগানোর এহতেমাম করা। মসজিদওয়ার জামাতের সকল সাথী রোজানা মাশওয়ারায় বসা, ঘর-ঘর মেহনতের তরতীব করা যাতে করে হার ফার্দের সাথে মোলাকাত হয় এবং রোজানা মসজিদ ও ঘরে তালিমের এহতেমাম করা বহুতি জরুরী। যে সমস্ত ইউনিয়নে/হালকায় সাপ্তাহিক মাশওয়ারা পূর্ব থেকে চালু আছে তা জারি রাখা।

৭. মাস্তুরাতের মেহনতের তাহসিনঃ

প্রতিটি জেলায় সাপ্তাহিক মাস্তুরাতের এস্তেমায়ী তালিমের পয়েন্ট বাড়ানোর চেষ্ট করা এবং যেখানে সাপ্তাহিক তালিম চালু আছে এহতেমামের সাথে মহল্লার সকল মা-বোনদের জুড়ার চেষ্টা করা অনেক জরুরী। সাপ্তাহিক তালিমের মাধ্যমে মহল্লার প্রতিটি ঘরে তালিম জিন্দা করা এবং ৩ দিনের জন্য মাস্তুরাতসহ জামাত বের করার কোশেষ করা। যাতে কিনা এই তালিমকে কেন্দ্র করে মহল্লায় নামাজির সংখ্যা বাড়ে এবং মা-বোনদের মধ্য পর্দা আসে; এতে দ্বীনি মহল বনবে।

৮. ছাত্র-নওজোয়ানদের উপর মেহনতের প্রচেষ্টাঃ

সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি ছাত্র স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। প্রতিটি জেলায় ছাত্র-শিক্ষক দেখভালের জামাতের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কামকে বাড়ানোর চেষ্টা করা। বছরের শুরুতে ও পরীক্ষার পূর্বে জোড় করা, বিভিন্ন মওকায় ৩ দিনের জন্য জামাতে বের করার তাশকিল করা, মোকামী গাশতের মওকায় ২/১ টি জামাত খুছুছি ভাবে ছাত্রদের মধ্যে পাঠানো। অনুরূপভাবে, প্রতিটি মসজিদে মসজিদ ওয়ার জামাত ছাত্রদের আলাদা লিস্ট করে তাদের পেছনে মেহনতকে বাড়ানো। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণের উপর মেহনত করে তাদেরকে কামে জুড়ানোর কোশেষ করা।

৯. প্রতিটি মসজিদ থেকে ৪ মাসের জামাত বের করার প্রচেষ্টাঃ

মাশওয়ারার মাধ্যমে মজবুদ ও সক্ষম মসজিদওয়ার জামাতের সাথীরা ১/২ জনকে বুনিয়াদ করে তারিখ নির্ধারণ করে সবাই মিলে মেহনত করে ঐ তারিখে ৪ মাসের জামাত বের করার চেষ্টা করা। এই জামাত ভাল করে হেদায়েত শুনে কোন মোনাসেব এলাকায় ৪ মাস পায়দল কাজ করে; এর দ্বারা কাজের ছাতা আগে বাড়বে।

১০. জেলায় প্রতি বছর ৪ মাসের এক মজমা তৈরী করার প্রচেষ্টাঃ

জেলায় বিভিন্ন মওকায় বছরে ৪ মাস লাগানোর জন্য জোর তরণীব দেওয়া, তাদের আলাদা করে রেজিস্টার করা, মওকা মহল দেখে মার্কাজে একত্রিত করে ৩ চিল্লার জন্য বের হওয়ার তরগীব ঢালা, ওয়াক্ত ১ চিল্লা করে দিবে নাকি একত্রে দিবে ইত্যাদি। কতজন বছরে ৪ মাসের জন্য তৈরী হল তা আগামী ত্রি মাসিক মাশওয়ারায় কারগুজারী পেশ করা।

১১. কাকরাইলে এক মাসের তরতীবে সাথী পাঠানোঃ

কাকরাইলে প্রায় ৩০-৩২ টি নজম আছে, যেমনঃ এখতেলাত, এস্তেগবাল, হালত শোনা, পাহাড়া, সাফাই ইত্যাদি। এই তাকাজাকে সামনে নিয়ে জেলার জিম্মাদার সাথী নিজে এক মাসের জন্য তৈরী হয়ে থানায় থানায় সফর করা ও এর ফাজায়েল শুনানোর দ্বারা এটা পুরা করা সম্ভব। যাতে করে সব জেলা থেকে যে পরিমাণ আজাইম দেয়া হয়, অনুরূপ মোনাসেব, কর্মক্ষম ও সকল নজমে এস্তেমাল করতে হতে পারে এরুপ সাথী পাঠানোর এহতেমাম করলে ভাল হয়। এর দ্বারা একদিকে যেমন মার্কাজের বিভিন্ন কাজে হাত বাটাতে পারে, অপরদিকে মার্কাজে অবস্থানকালে বড়দের বিভিন্ন মোজাকারার দ্বারা ফায়দা হাসিল করা যায়। ঢাকার ৮টি শবগুজারী পয়েন্টের সাথীগণ আগামী ২৪ ঘন্টার জোড়ে এর আজাইম তৈরী করে (কত সাথী কোন মাসে দিবেন) কাকরাইলে পেশ করলে বহুতি ভাল হয়।

১২. ৪০-৪০ তরতীবে কাকরাইলের নজমে সাথী পাঠানোঃ

আমাদের পূর্ববর্তী বুজুর্গ গণের অনেক কুরবানী ও রোনাজারীর ফসল এই কাকরাইল মার্কাজ। এই মার্কাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন নজম যেমন বিদেশী খিমা, দেশী-বিদেশী তাশকিল, মাস্তুরাত, খেদমত ইত্যাদি সারা বছর সামলানোর জন্য ৪০-৪০ তরতীবের সাথী একান্ত প্রয়োজন। তাই জেলার যে সমস্ত সাথী বছরে ৪ মাস লাগান, বিভিন্ন নজম সামলানোর যোগ্যতা রাখেন, মার্কাজের মহলে জুড়ে মিলে চলতে পারেন এরূপ মোনাসেব সাথীদেরকে জিম্মাদার সাথীগণ মাশওয়ারা করে ৪০-৪০ তরতীবে চিঠি সহকারে কাকরাইলে পাঠানোর এহতেমাম করলে বহুতি ভাল হয়। 

১৩. এস.এস.সি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের উপর মেহনতঃ

(ক) এস.এস.সি ও দাখিল পরীক্ষা আগামী ১০ এপ্রিল ২০২৫ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। এখন থেকে এস.এস.সি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের মসজিদওয়ার লিষ্ট বানিয়ে তাদের সঙ্গে মোলাকাত করা ও অভিভাবকদের জেহেন বানানো। পরীক্ষার আগে কোন মওকায় দোয়ার জন্য একত্রিত করে অভিভাবকসহ তাশকিল করা। কারন জীবনের শুরুতে দ্বীনি জেহেন বনলে সারা জীবন তার আছর বাকী থাকে। জামাতগুলোতে ছাত্রসংখ্যা বেশি না হওয়া, মুনাছেব জিম্মাদার ও সাথী দেয়া এবং যেখানে জামাত যায় ঐ এলাকার সাথীরা বারী বারী করে জামাতের সাথে থেকে নুসরত করার এন্তেজাম করা। জেলার মার্কাজগুলোতে রওনগী কথা, জিম্মাদারদারদের সাথে কথা ইত্যাদি এহতেমাম হওয়া জরুরী। এস.এস.সি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের খুরুজ অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও নিজ জেলা থেকে হবে। রোখ কাকরাইল থেকে দেয়া পাঠানো হবে। উল্লেখ্য যে, প্রয়োজনে জেলার সাথীরা এস.এস.সি ছাত্র জামাতের রোখ মোনাসেব জায়গায় পরিবর্তন করে কাকরাইলের দেশী তাশকিলে জানিয়ে দিবেন।

(খ) আগামী ২৬ শে জুন ২০২৫ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির পর এনারাও দীর্ঘ সময় ফারেগ থাকেন। তাই এই ছাত্রদেরকে কম বেশী যতটুক সময়ের জন্য সম্ভব তাদের পেছনে গাশত করে আল্লাহ পাকের রাস্তায় বের করার চেষ্টা করা বহুতি জরুরী।

১৪. হাজী সাহেবানদের উপর মেহনতঃ

হাজী সাহেবানদের উপর মেহনত আমাদের বড়দের যামানা থেকে হয়ে আসছে। হাজী সাহেবানরা আমাদের প্রতিনিধি। তারা সহীহভাবে হজ্জ করলে আমাদের জন্য রহমত ও বরকত নিয়ে ফিরে আসবেন। এজন্য এখন থেকে খোজখবর নিয়ে আগামী বছর যারা হজ্জে যাবেন তাদের উপর মেহনত করা যাতে একই এজেন্সীতে রেজিষ্ট্রেশন করেন ও একই ফ্লাইটে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া হজ্জে উনুয়ানের উপর তাশকিল করে জামাত না বানানো। প্রতিটি জামাতে ২/৩ জন পুরাতন হাজী সাহেবান থাকেন এবং কাকরাইল থেকে হেদায়েতের কথা শুনে যাওয়া।

১৫. দেশী-বিদেশী জামাতের নুসরতঃ

দেশী-বিদেশী জামাতের নুসরত অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য মোনাসেব পুরানা সাথী/ সালের ওলামা হাযরাতদের নিয়ে ২ জন-২ জন বারি বারি করে ২৪ ঘন্টার জন্য জামাতের সাথে থেকে নুসরত করা। যাতে কিনা জামাতের সাথে মোজাকারা ও গাশতের মাধ্যমে তালিম তরবিয়তের ফিকির করতে পারেন । ইনশাআল্লাহ আগামী ত্রি মাসিক মাশওয়ারা ২৭ ও ২৮ জুন, ২০২৫ (শুক্রবার ও শনিবার) হবে। মাশওয়ারার প্রথম নিশিস্ত শুক্রবার সকাল ৯.৩০ টা থেকে শুরু হবে।
Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url