সকাল বিকাল তিন তাসবিহ: পড়ার নিয়ম ও ফাজাইল

আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং আত্মশুদ্ধির জন্য জিকির বা আল্লাহকে স্মরণ করার কোনো বিকল্প নেই। দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে সাথীদের আত্মিক উন্নতির জন্য প্রতিদিন সকাল-বিকালে নির্ধারিত কিছু জিকির বা তাসবিহ পাঠ করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা 'তিন তাসবিহ' নামে পরিচিত। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো তিন তাসবিহ কি, পড়ার নিয়ম এবং এর ফজিলত সম্পর্কে।

তিন তাসবিহ কি কি?

এই আমলটিকে তিন তাসবিহ বলা হয় কারণ এখানে মূলত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন জিকির ১০০ বার করে মোট ৩০০ বার পড়া হয়। জিকিরগুলো হলো:

১. ৩য় কালিমা বা তাসবিহ-এ-ফাতেমি (১০০ বার):

আল্লাহর পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করা। সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

২. দরুদ শরীফ (১০০ বার):

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করা। যেকোনো দরুদ শরীফ পড়া যায়। তবে নামাজে যে দরুদ পড়া হয় (দরুদে ইব্রাহিম) তা সর্বোত্তম। অথবা সংক্ষেপে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়লেও হবে।

৩. ইস্তেগফার (১০০ বার):

নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। যেকোনো ইস্তেগফার পড়া যায়। সবচেয়ে ছোট এস্তেগফার হলো "আস্তাগফিরুল্লাহ" বা "রব্বিগফিরলি" অথবা "আল্লাহুম্মাগফিরলি"।

তিন তাসবিহ
সকাল বিকাল তিন তাসবিহ

তিন তাসবিহ পড়ার নিয়ম

আল্লাহর জিকির যেকোনো সময় যেকোনো অবস্থায় করা যায় (পবিত্র অবস্থায়)। তবে এই বিশেষ তিন তাসবিহ আদায়ের উত্তম ও মোস্তাহাব কিছু নিয়ম রয়েছে, যা অন্তরে জিকিরের প্রভাব ফেলতে সাহায্য করে।

  • ঘরে আমল করার ক্ষেত্রে: পবিত্র অবস্থায় জায়নামাজ বিছিয়ে কেবলামুখী হয়ে তাশাহুদের সূরতে বিনয়ের সাথে বসে পড়া।
  • মসজিদে বা জামাতে থাকা অবস্থায়: কেবলামুখী হয়ে আত্তাহিয়াতু সূরতে কাতারে বসে আদবের সাথে তাসবিহ পাঠ করা।
  • নীরবতা পালন: পাঠরত অবস্থায় কারো সাথে কথাবার্তা না বলা। পূর্ণ ধ্যান ও মনোযোগ আল্লাহর দিকে রাখা।
  • সময়: প্রতিদিন সকালে (ফজরের পর) এবং বিকালে (আসরের পর বা মাগরিবের আগে/পরে) পড়া। সকালে প্রতিটি তাসবিহ ১০০ বার করে মোট ৩০০ বার এবং বিকালেও একইভাবে ৩০০ বার পড়া।

তিন তাসবিহ এর ফজিলত

এই তিন তাসবিহ নিয়মিত আমল করার ফজিলত অনেক। বুজুর্গদের অভিজ্ঞতা ও হাদীসের আলোকে কিছু ফজিলত এখানে আলোচনা করা হলো।

বুজুর্গদের অভিজ্ঞতা:

তাবলীগের হক্কানী ওলামায়ে কেরাম ও মুরুব্বীরা তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলেন,

"যদি কোনো ব্যক্তি একাধারে তিন বছর সকাল ও বিকাল এই তিন তাসবিহ’র আমল কোনো বিরতি ছাড়া করতে পারে, তবে আল্লাহ পাক তাকে তাঁর ওলী (বন্ধু) না বানিয়ে কবরে নিবেননা ইন শা আল্লাহ।"

হাদীসের আলোকে ফজিলত:

  1. তাসবিহ (৩য় কালিমা): রাসুল (সা.) বলেছেন, এই বাক্যগুলো আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং এগুলো জান্নাতের চারাগাছ স্বরূপ।
  2. দরুদ শরীফ: যে ব্যক্তি একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করেন, ১০টি গুনাহ মাফ করেন এবং জান্নাতে ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
  3. ইস্তেগফার: যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেন এবং এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।

হাতে তিন তাসবিহ পড়ার নিয়ম

জিকির করার জন্য তাসবিহ দানা ব্যবহার করা জায়েজ হলেও, হাতের আঙ্গুলে বা করে গণনা করা সুন্নাত এবং অধিক ফজিলতপূর্ণ। কারণ কিয়ামতের দিন এই আঙ্গুলগুলো সাক্ষ্য দিবে।

পদ্ধতি:

ডান হাতের আঙ্গুলের গিরা বা কর ব্যবহার করে গণনা করা উত্তম। আরবের প্রথা অনুযায়ী কনিষ্ঠ আঙ্গুল (ছোট আঙ্গুল) থেকে শুরু করে ওপরের দিকে বা নিচের দিকে গুনে আসা যায়। মূল কথা হলো, সংখ্যা ঠিক রাখা এবং সুন্নাহর অনুসরণে ডান হাত ব্যবহার করা।

উপসংহার:

তিন তাসবিহ’র আমলটি দেখতে ছোট মনে হলেও এর ওজন মিজানের পাল্লায় অনেক ভারী। আসুন আমরা আমাদের ব্যস্ত জীবনের কিছু সময় বের করে সকাল-বিকাল এই আমলটি নিয়মিত করার চেষ্টা করি এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হই।

Previous Post