তাবলীগের মোজাকারা: মুজাকারার অর্থ, গুরুত্ব ও ঈমানী মোজাকারার সঠিক পদ্ধতি
দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে "মোজাকারা" একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত আমল। দ্বীনের ইলম চর্চা, মাসআলা-মাসায়েল ঝালাই করা এবং অন্তরে আল্লাহর ভয় ও মহব্বত জাগ্রত রাখার অন্যতম মাধ্যম হলো এই মোজাকারা। আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো মোজাকারা আসলে কী, এর শাব্দিক অর্থ এবং তাবলীগের মেহনতে ঈমানী মোজাকারার গুরুত্ব ও পদ্ধতি নিয়ে।
মুজাকারা অর্থ কি?
'মোজাকারা' বা 'মুজাকারা' (مذاكرة) শব্দটি আরবি। এর মূল ধাতু হলো 'জিকির' (ذكر), যার অর্থ স্মরণ করা। ব্যাকরণগতভাবে 'মোজাকারা' অর্থ হলো পরস্পরে স্মরণ করা, আলোচনা করা বা একে অপরকে মনে করিয়ে দেওয়া।
ইসলামী পরিভাষায়, কোনো নির্দিষ্ট দ্বীনি বিষয়, ইলম বা মাসআলা নিয়ে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে যে আলোচনা হয়, তাকেই মোজাকারা বলা হয়। হাদিস শরীফে ইলমের মোজাকারাকে নফল ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে, কারণ এর মাধ্যমে ভুলে যাওয়া ইলম পুনরায় স্মরণ হয় এবং নতুন বিষয় জানা সহজ হয়।
তাবলীগের মোজাকারা কি
তাবলীগ জামাতে মোজাকারার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এখানে মোজাকারা বলতে সাধারণত সাথীদের মধ্যে দ্বীনের বুনিয়াদি বিষয়গুলো নিয়ে পারস্পরিক আলোচনাকে বোঝানো হয়। এটি কোনো একতরফা বয়ান বা বক্তৃতা নয়, বরং এটি হলো দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বা পড়াশোনার মতো রিভিশন দেওয়া।
তাবলীগের মোজাকারার মূল উদ্দেশ্য হলো:
- ১. ইলম ঝালাই করা: নামাজ, ওজু, গোসল, দায়েমি সুন্নত-ফরয বা দৈনন্দিন সুন্নাতগুলো একে অপরের সাথে বলে আয়ত্ত্ব করে নেওয়া।
- ২. সিফাত চর্চা: তাবলীগের ৬টি গুণ বা সিফাত (ঈমান, নামাজ, ইলম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমীন, এখলাসে নিয়্যত, দাওয়াত ও তাবলীগ) নিয়ে আলোচনা করা।
- ৩. আদব শিক্ষা: মসজিদ, খাওয়া, ঘুম বা সফরের আদব ও সুন্নাতগুলো মনে করিয়ে দেওয়া।
তাবলীগে সাধারনত বাদ যোহর এবং বাদ এশা আমীর সাহেব সাথীদের নিয়ে গোল হয়ে বসে এই মোজাকারা করেন, যা তাদের উম্মতের ফিকির ও ইলমী জজবাকে অটুট রাখতে সাহায্য করে।
ঈমানী মোজাকারা
মোজাকারার মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং রুহানি অংশ হলো 'ঈমানী মোজাকারা'। ঈমানী মোজাকারা হলো আল্লাহর কুদরত, বড়ত্ব, জান্নাত-জাহান্নাম এবং আখেরাতের অনন্ত জীবনের আলোচনা করা।
আমাদের চারপাশে দুনিয়ার বস্তুর আলোচনা এত বেশি হয় যে, অন্তরে বস্তুর ওপর একীন বা বিশ্বাস এসে যায়। এই ভুল বিশ্বাস দূর করে আল্লাহর ওপর পূর্ণ একীন আনার জন্য ঈমানী মোজাকারার কোনো বিকল্প নেই।
ঈমানী মোজাকারায় সাধারণত যে বিষয়গুলো আলোচনা হয়:
- সৃষ্টিজগত থেকে শিক্ষা: আল্লাহ কীভাবে আসমান, জমিন, পাহাড় ও সমুদ্র সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি কীভাবে মাখলুকাতকে রিজিক দেন।
- বস্তুর অক্ষমতা: টাকা, পয়সা, বা কোনো বস্তুর নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই; সব ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর এই বিশ্বাস অন্তরে বসানো।
- নবী ও সাহাবীদের কুরবানি: দ্বীনের জন্য সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর ত্যাগের ঘটনাগুলো স্মরণ করা।
ঈমানী মোজাকারা মুমিনের ঝিমিয়ে পড়া ঈমানকে বিদ্যুতের মতো সতেজ করে দেয় এবং আমলের প্রতি আগ্রহ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।