তাবলীগের এলান: আসর, মাগরিব ও তারুফি এলান দেওয়ার সঠিক নিয়ম

দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত সারা বিশ্বে ঈমান ও আমলের পুনরুজ্জীবনের এক বিশাল মাধ্যম। এই মেহনতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো এলান। মসজিদের মুসল্লীদের দ্বীনের কথা শোনানোর জন্য এবং জামাতের কার্যক্রমে শরিক করানোর জন্য এলান একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আজকের আর্টিকেলে আমরা তাবলীগের এলান, এর অর্থ এবং বিভিন্ন ওয়াক্তে এলান দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি ও নমুনা নিয়ে আলোচনা করবো।

এলান অর্থ

'এলান' (إعلان) একটি আরবি শব্দ, যার শাব্দিক অর্থ হলো ঘোষণা করা, প্রচার করা বা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া। তাবলীগের পরিভাষায়, নামাজের পর মুসল্লীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্বীনি আলোচনা শুনার জন্য যে সংক্ষিপ্ত ঘোষণা দেওয়া হয়, তাকেই এলান বলা হয়।

এলানের মূল উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর বান্দাদের দুনিয়াবী ব্যস্ততা থেকে ক্ষণিকের জন্য ফারেগ করে আখেরাতের অসীম ফায়দার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। এটি কোনো বক্তৃতা নয়, বরং অত্যন্ত বিনয়ী ও দরদভরা সুরে দ্বীনের প্রতি আহ্বান।

মাগরিবের এলান

মাগরিবের নামাজের পর সাধারণত মসজিদে ঈমান ও আমলের বয়ান হয়। এই বয়ান শোনার জন্য মুসল্লীদের বসার আহ্বান জানিয়ে যে ঘোষণা দেওয়া হয়, তাই মাগরিবের এলান। এই এলানটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও আকর্ষণীয় হওয়া চাই।

তাবলীগের এলান
তাবলীগের এলান

মাগরিবের এলানের একটি সুন্দর নমুনা:

ইন শা আল্লাহ বাকি নামাযের পর ঈমান ও আমলের মেহনত সম্পর্কে জরুরি কথা হবে, আমরা সবাই বসি বসলে অনেক ফায়দা হবে।

অথবা,

ইন শা আল্লাহ বাকি নামাযের পর দ্বীনি আলোচনা হবে, আমরা সবাই বসি বসলে বহুত ফায়দা হবে।

বিঃ দ্রঃ আমরা এলানে বলে থাকি "জরুরি বয়ান হবে"। এই বয়ান শব্দটা আওয়াম সাথীর সাথে যায় না। কারন আওয়াম সাথী বয়ান করার যোগ্যতা রাখেন না বরং তিনি মুজাকারা করেন। বয়ান শব্দটা শুধুমাত্র ওলামায়ে কেরামের সাথে খাছ। তাই আওয়াম সাথীর ফয়সালা থাকলে "জরুরি কথা হবে" এটাই বলবো। এছাড়া এলানে অনেকে লম্বা চওড়া কথা বলেন। এই ধরনের লম্বা চওড়া এলান দিতে বড়রা পাচ দিনের জোড়ের মোজাকারায় অনেক বার নিষেধ করেছেন।

(দ্রষ্টব্য: এলানকারীর আওয়াজ হতে হবে নরম ও বিনয়ী, যাতে মুসল্লীরা বিরক্ত না হয়ে বরং বসতে আগ্রহী হন)

আসরবাদ এলান বা গাস্তের এলানঃ

তাবলীগ জামাতের একটি মূল স্তম্ভ হলো 'গাস্ত'। আল্লাহর দ্বীনকে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আসরের পর গাস্ত করা হয়। আছরের নামাজের পর জামাত দুইটি ভাগে বিভক্ত হন, একদল মসজিদে আমল করেন এবং একদল মহল্লার ভিতরে গাস্তে বের হন। গাস্তের এলানটি মাগরিবের এলান থেকে একটু ভিন্ন হয়, আসরের নামাজের সালাম ফেরানোর পরপরই এই এলানটি দিতে হয়।

আসরবাদ এলানের নমুনাঃ

ইন-শা-আল্লাহ, দুয়াবাদ মহল্লায় দাওয়াতের আমল হবে এবং মসজিদে ঈমান ও একীনের কথা হবে। আমরা সবাই বসি, বসলে বহুত ফায়দা হবে।

অথবা,

ইন-শা-আল্লাহ, দুয়াবাদ মহল্লায় দাওয়াতের আমল হবে এবং মসজিদে এই বিষয়ে কথা হবে। আমরা সবাই বসি, বসলে অনেক ফায়দা হবে।

তারুফি এলানঃ

আলহামদুলিল্লাহ, মোবারক দ্বীনের মেহনত নিয়ে এক জামাত আপনাদের মহল্লায় উপস্থিত। বাকী নামাযের পরে মহল্লাবাসীদের সাথে জরুরী পরামর্শ হবে। আমরা সবাই বসি, বসলে বহুত ফায়দা হবে- ইন শা আল্লাহ।

নোটঃ তারুফি এলানের ক্ষেত্রে একটা ভূল প্রায় সব সাথীরাই করে থাকি। আমরা বলে থাকি দ্বীনের মোবারক মেহনত নিয়ে এক জামাত এসেছে। আসলে এখানে মেহনত মোবারক হবে না বরং আল্লাহপাকের দ্বীন হলো মোবারক। সুতরাং বলতে হবে মোবারক দ্বীনের মেহনত নিয়ে এক জামাত এসেছে। এলান দেওয়ার সময় এই বিষয়টা বিশেষভাবে খেয়াল করবো।

এলান দেওয়ার সময় লক্ষ্যণীয় কিছু বিষয়:

  1. সংক্ষিপ্ততা: এলান খুব দীর্ঘ করা যাবে না।
  2. বিনয়: আদেশের সুরে নয়, বরং অনুরোধের সুরে বলতে হবে।
  3. স্পষ্টতা: কথাগুলো স্পষ্ট ও সাবলীল হতে হবে।
  4. আল্লাহর নাম: এলানের শুরুতে ইন শা আল্লাহ শব্দ ব্যবহার করা।

এলান হলো দ্বীনের পথে ডাকার একটি মাধ্যম। সুন্দর ও সঠিক পদ্ধতিতে এলান দিলে মানুষের দিল নরম হয় এবং তারা দ্বীনের কথা শুনতে আগ্রহী হয়। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সহীহ তরিকায় দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।

Next Post Previous Post