বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে সাথীরা তিন দিন কিভাবে কাটাবে?
দ্বীনের তাকাজার উপর একত্রিত হওয়া কোন নতুন জিনিস নয়, হজরত ছাহাবা (রাঃ) আজমাইনদের জামানা থেকেই চলে আসছে। তবে আজকে এজতেমার যে সেকেল আমরা দেখছি এই রুপ তখন ছিল না। সেই সময় এজতেমার তারিখ হত না, কোন গাস্ত হতো না, মজমা করে তরগীব দেয়ার প্রয়োজন হতো না। শুধুমাত্র এলান করে জানিয়ে দেয়া হতো আসসালাতু জামিয়া। এই এলানের মধ্যে এমন এক তাছির ছিল যে, উম্মৎ দুনিয়ার মশগুলিয়াতের মধ্যে যতই আবদ্ধ থাকুক না কেন এলান শুনার সাথে সাথে সব কিছু থেকে ফারেগ হয়ে মসজিদে নববীতে একত্রিত হয়ে যেত।
এই একত্রিত হওয়া আজকের মত নির্দিষ্ট কোন ওয়াক্তের উপর হতো না। বরং যতক্ষন লাগুক এবং যতমাস যত বৎসর লাগুক আগে দিনের তাকাজা পুরা করব পরে সময় থাকলে দুনিয়া করব। এই ছিল হজরত ছাহাবা (রাঃ) দের একত্রিত হওয়ার উদ্দেশ্য।
আর সেই সময় মজমায় কোন বায়ান হতো না, তশকিল হতো না। হুজুর (সাঃ) নূরানী আর রহমানী চেহারা নিয়ে মিম্বরে তসরিফ রাখতেন এবং ছাহাবা (রাঃ) দের সামনে হালের তাকাজা পেশ করতেন। তাকাজা শুনার পর একজন মুসলসান কেউ পাওয়া যেত না যে আল্লাহর রাস্তায় যাওয়ার জন্য তৈরী না হত।তার পর মজমার একেক পার্শ্বের সাথীদের একেক দিকে পাঠাবার জন্য ফয়সালা করতেন। তারপর আজকের মতই রওনকী হেদায়েত দিয়ে জামাতের আমীর মামুর ঠিক করে জামাতকে আল্লাহর রাস্তায় পাঠাতেন।
সেই জামানায় যারা ঘরে থেকে যেত তাদের জিম্মায় দুটি কাজ হতোঃ
- তোমাদের নিজেদের কাজ যা আছে তা কর এবং
- যারা আল্লাহর রাস্তায় যাচ্ছে তাদের বাড়ী ঘর এবং কাজের নিগরানী করো।
উম্মত যখন এই কাজের উপর ছিল তখন অমুসলমানগন মুসলমানদের পবিত্র জিন্দেগী দেখে দেখে ইসলামে দাখিল হইতেছিল। সেই সময় একজন সাধারন মুসলমান হারাম কাজ ও হারাম কামাই কে এই পরিমান ভয় করত আজকে আমরা আগুনে পড়াকে যে পরিমান ভয় করি।
উম্মৎ আখেরাতের তাকাজা/ দ্বীনের তাকাজা পুরা করাকে জীবনের মাকসুদ বানানোর কারনে তারা দিন দিন আখেরাতের লাইনে তরক্কী করতে ছিল। হার হালে আল্লাহ পাকের গায়েবী মদদ তাদের সাথে ছিল এবং আল্লাহ পাকের সমস্ত সৃষ্টি মুসলমানদের ভয় করত।
অপর দিকে ইসলামের বড় বড় আমল যেমন নামাজ রোজা হজ্জ যাকাত ইত্যাদি ছেড়ে দেওয়া তো দূরের কথা বরং না করার কল্পনাও একজন সাধারন মুসলমানের দীলের মধ্যে আসত না। আজ উম্মতের অবস্থা কি আমরা চিন্তা করি। উম্মৎ আজকে এমনভাবে অধঃপতনের সর্ব নিম্ন স্তরে পৌচ্ছে গেছে যার নিচে আর কোন জায়গা নাই।
উম্মত আজকে নামাজ ছেড়ে দিয়েছে। আমরা আকসারিয়াত হারাম কামাইর মধ্যে নিমজ্জিত। এর কারণ সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম বলেন, আমরা আমাদের জিন্দেগীর মকসুদ মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা অর্থাৎ দাওয়াতের আমল ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহ পাকের আহকামাত সারা দুনিয়ার সমস্ত মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল এই উম্মতের হায়াতের জিন্দেগীর মকসুদ ও প্রধান কাম যা আমারা ছেড়ে দিয়েছি। এই কাম ছেড়ে দেওয়ার কারনেই আল্লাহ পাকের রহমত ও বরকত থেকে এই উম্মৎ খালি হয়ে গেছে।
আজকে সাড়া দুনিয়া থেকে জান ও মালের কুরবানী দিয়ে যে সমস্ত জামাত টঙ্গীর ময়দানের দিকে আসতেছে তারা আল্লাহ এবং তদীয় রাসূল (সঃ) এর সন্তোষ্টির জন্যই আসতেছে। এরা সবাই মুখলেছিনদের জমাত। আনেওয়ালাদের যদি ছহি এস্তেমাল হয়ে যায় তবে হতে পারে আল্লাহ পাক এই এস্তেমাকে জড়িয়া করে সারা দুনিয়াতে হেদায়েত দিয়ে দিবেন। আল্লাহ পাকের দ্বীনকে আল্লাহ পাক আবার দুবারা জিন্দা করে দিবেন।
এজতেমায় আনেওয়ালা সবার জন্যেই ৪ টা আমল জরুরী।
পুরা মজমা দাওয়াতের আমলের মধ্যে থাকে। দাওয়াতের আমল হলো, উম্মতের দীলে আজ মাখলুকের একিন। আল্লাহ ও তার হুকুমের একিন থেকে আজ উম্মতের দীল খালি। দাওয়াতের খুলাসা হল দীল থেকে মাখলুকের একিন বের করে আল্লাহর জাতের একিন ও আল্লাহর ওয়াদার একিন বসাবার কুশেষ করা।
আর বয়ানের সময় পুরা মজমা সমস্ত কথাগুলি ধ্যানের সাথে শুনে, তশকিলের সময় পুরা মজমার তাওয়াল্লোক তশকিলের দিকে থাকে, একে অন্যকে দাওয়াত দেয়। প্রথমত হল নিজেই তশকিল হয়। দ্বিতীয় হল অন্যকে তশকিল করতে চেষ্টা করে। তৃতীয় হল নিজেও তশকিল হল না, অন্য কেউ তশকিল করতে পারলো না এই হালে দীল দিয়ে দোয়া করতে থাকে যে, হায় আল্লাহ আমাদের সবার দীলে সব কথার বুঝ পয়দা করে দাও যাতে আমরা তোমার রাস্তায় বেড়িয়ে যেতে পারি। আখের যখন কিছু ভাই ঘরে ফিরে যাবে তার জন্য জরুরী হল সে যেন সরমিন্দার সাথে ঘরে ফিরে। এবং খুব তাড়াতাড়ি আল্লাহর রাস্তায় আসার নিয়ত করে যায়।
মোট কথা কেউ গাফেল না থাকে সবাই দাওয়াতের কথা শুনে অথবা দাওয়াত দেওয়ার এহতেমাম করে। আল্লাহর কথাকে ধ্যানের সাথে শুনার মধ্যে এতবড় তাকদ আল্লাহ পাক রেখেছেন যে, শুননেওয়ালাকে আল্লাহ পাকের এতায়াতের উপর নিয়ে আসবেন।
যখন জরুরতের জন্য মজমা ছেড়ে দেওয়া হবে তখনও আমরা দাওয়াতের আমল করব। একেক জনের জেহেন বানাব। আগামী তিন দিন আমরা দুনিয়ার কথা বলবো না। দুনিয়ার আলোচনা শুনবো না। হার হালে দাওয়াতের আমলের মধ্যে নিজেকে জুড়ে রাখতে চেষ্টা করব। হয় দাওয়াত দেব না হয় অন্যের দেয়া দাওয়াত শুনবো।
পুরা মজমাকে এলমে এলাহীতে মশগুল রাখব। কালামে পাক এবং হাদিসে পাক হল এলমে এলাহী। ফাজায়েল এলেম হল সেই এলেম যা মানুষকে ভিতর থেকে খুদ তৈয়ার করে আল্লাহ পাকের সমস্ত হুকুম মানার জন্য এবং নাফরমানীর থেকে বাচার জন্য। এজন্য তালিমের হালকাতে সমস্ত মজমাকে আমারা মশগুল করবো এবং নিজেরাও মশগুল থাকব।
হযরত ছাহাবা (রা) দের মধ্যে কোন বেশি জাননে ওয়ালা যদি কম জাননে ওয়ালাকে পাইতেন তবে তাকে শিখানো নিজের উপর হক মনে করতেন এবং কম জাননে ওয়ালা যদি বেশি জাননে ওয়ালাকে পাইতেন তবে তার কাছ থেকে শিখাকে নিজের উপর হক মনে করতেন।
হযরত ওমর (রা) একদিন তাওয়াফের সময় একজন দেহাতীকে পাইলেন। তিনি তোয়াফের দোয়া বাদ দিয়ে তাকে আত্তাহিয়াতু শিখানো আরম্ভ করলেন। আজ এই অবস্থা আমাদের মধ্যে নাই ৷ আমরা আমাদের এজতেমায় এই আমলকে রেওয়াজে আনার জন্যে চেষ্টা করব।
পুরা মজমা আল্লাহর ইয়াদের মধ্যে মশগুল থাকে। আল্লাহর সব চেয়ে বড় ইয়াদ হল পাচ ওয়াক্ত নামাজ। আমাদের নামাজ গুলি নূরানী বানাবার জন্যে চেষ্টা করব। দোয়ার এহতেমাম ও কোরআনে পাকের তেলাওয়াতের এহতেমাম এ সবই আল্লাহর ইয়াদ।
যদি এই সব আমলের মওকা না পাওয়া যায় তখন পুরা মজমাকে আমাদের উপর হক মনে করে তাদের খেদমত করবো। আমাদের বড় হযরত জি (রহঃ) বলতেন,
এবাদতের দ্বারা জান্নাত পাওয়া যায় আর বেগরজ হয়ে খেদমতের দ্বারা আল্লাহকে পাওয়া যায়।
খিত্তাওয়ালা ও মসজিদ ওয়ার জামাতের জিম্মাদারীঃ
- সবাই বয়ান শুনে ও শুনায়।
- সবাই তালিম করে ও করায়।
- সবাই খাদেম বনে খেদমত করে।
- খাওয়াজদের নিগরানী করে ও খেদমত করে।
- কেউ যদি চারি আমালের বাইরে থাকে তবে সর্বোত্তম পন্থায় তাকে আমলে জুড়াবার চেষ্টা করে।
- বর্তমান সময়ে দুনিয়াতে অনেক ঘটনাই ঘটতেছে। কোন ঘটনা নিয়ে আমরা আলোচনা করব না। যদি কেউ করতে চায় সর্বোত্তম পন্থায় তাকে ফেরাতে চেষ্টা করবো।
উম্মতের মধ্যে এসতেদাত না থাকার কারণে আমরা চেষ্টা করলেও কাবুতে নাও আসতে পারে। যদি তাই হয় তবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকের দ্বারা জুরনে ওয়ালী জামাত তৈরী করে পুরা মজমার উপর মেহনত হতে পারে। যাদের দ্বারা ২/৩ জন করে জামাত বানিয়ে ঐ সমস্ত সাথীদের সাথে কথা বলে মুতোয়াজ্জো করা যেতে পারে যাতে তারাও চারি আমলে জুড়ে যায়।
এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাথীর দ্বারা একটা নিগরানী করণে ওয়ালা জামাত বানিয়ে পুরা মজমায় নিগরানী করা যেতে পারে। পুরা মেহনত শরীরের মতো আর দোয়া রুহের মত। কোন শরীরকেই জিন্দা বলা যায় না যতক্ষন শরীরের ভিতরে রুহ্ না আসে। আর কোন শরীর থেকে রুহ বেড়িয়ে যাওয়াকে মওত বলা হয়। কাজেই আমরা জাহেরী তদবীর অর্থাৎ মেহনত করবো এবং আল্লাহর কাছে চোখের পানির সাথে নিজের জন্যও এবং সমস্ত উম্মতের জন্য দোয়া করবো।