তাবলীগের ইজতেমায়ি ও ইনফেরাদি আমল: পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও আমলের নিয়ম
আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে যুক্ত হওয়া মানে শুধু সফরে বের হওয়া নয়, বরং নিজের পুরো জীবনকে সুন্নাত অনুযায়ী সাজানোর অনুশীলন করা। এই অনুশীলনের দুটি প্রধান দিক হলো এস্তেমায়ী আমল (সম্মিলিত কাজ) এবং ইনফেরাদি আমল (ব্যক্তিগত কাজ)। জামাতের শৃঙ্খলা এবং নিজের আত্মশুদ্ধির জন্য এই দুই ধরনের আমলের সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। আজকের আর্টিকেলে আমরা এই দুই প্রকার আমলের বিস্তারিত জানবো।
এস্তেমায়ী আমল কাকে বলে?
'এস্তেমায়ী' (إجتماعي) শব্দের অর্থ হলো সম্মিলিত বা দলবদ্ধ। তাবলীগের পরিভাষায়, জামাতের সকল সাথী মিলে একসাথে আদায় করা হয় যে আমলগুলো তাকে এস্তেমায়ী আমল বলে। এই আমলগুলো জামাতের রুহানিয়ত ও শৃঙ্খলা বজায় রাখে।
ইজতেমায়ি আমল কয়টি?
তাবলীগের সফরে বা জামাতে থাকাকালীন ১অ টি কাজকে ইজতেমায়ি আমল হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমলগুলো হলো:
- নামাজ: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তাকবীরে উলার সাথে জামাতে আদায় করা। এটি মুমিনের প্রধান ইজতেমায়ি ইবাদত।
- মাশওয়ারা (পরামর্শ): দিনের কাজ কীভাবে হবে, তা নিয়ে আমীরের নেতৃত্বে সবার মতামত নেওয়া।
- তালিম: ফাজায়েলে আমল বা নির্দিষ্ট কিতাব থেকে হাদিস পাঠ ও শোনা, যাতে ইলমের নূর অন্তরে আসে।
- উমুমি গাশত: আল্লাহর বান্দাদের আল্লাহর ঘরের দিকে ডাকার জন্য মহল্লায় দলবদ্ধভাবে দাওয়াত দেওয়া।
- বয়ান: ঈমান ও আমলের কথা সম্মিলিতভাবে শোনা, যা দিলের জং দূর করে।
- মুযাকারা: ইলম, জিকির বা ৬ সিফাত নিয়ে সাথীদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা।
- মঞ্জিল: সফরের সময় নতুন কোনো মসজিদে বা স্থানে পৌঁছানোর আগে দাড়িয়ে সম্মিলিত দোয়া ও আমল।
- সফর: এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আল্লাহর দ্বীনের জন্য দলবদ্ধভাবে গমন করা।
- খানা (খাবার): সুন্নাত তরিকায় দস্তরখানে বসে সবাই মিলে একসাথে খাবার খাওয়া।
- ঘুম: সুন্নাত তরিকায় নির্দিষ্ট সময়ে একসাথে বিশ্রাম নেওয়া বা ঘুমানো।
ইনফেরাদি আমল কাকে বলে?
'ইনফেরাদি' (إنفرادي) শব্দের অর্থ হলো ব্যক্তিগত বা একাকী। যে আমলগুলো বান্দা একান্তই নিজের এবং আল্লাহর মাঝে গোপনে বা একাকী করে থাকেন, তাকে ইনফেরাদি আমল বলে। দাওয়াতের কাজে বরকত এবং নিজের আত্মশুদ্ধির (তাজকিয়া) জন্য ইনফেরাদি আমল অপরিহার্য।
ইনফেরাদি আমল কি কি?
তাবলীগের মুরুব্বীরা সাথীদের ইনফেরাদি আমলের ওপর খুব জোর দেন। কারণ, যে দায়ী ব্যক্তিগত আমলে যত মজবুত, তার দাওয়াতের তাসির (প্রভাব) তত বেশি। দৈনন্দিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইনফেরাদি আমল হলো:
- তিলাওয়াত: প্রতিদিন কমপক্ষে এক পারা কুরআন কারীম তিলাওয়াত করা।
- হাদিস মুখস্ত: প্রতিদিন অন্তত একটি হাদিস মুখস্ত করা এবং এর অর্থের ওপর চিন্তা-ফিকির করা।
- মাসনূন দোয়া: দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজের (যেমন- খাওয়া, ঘুমানো, বাথরুমে যাওয়া) একটি করে মাসনূন দোয়া মুখস্ত করা ও আমল করা।
- নফল নামাজ: তাহাজ্জুদ, ইশরাক, আওয়াবিন ও চাশতের নামাজ নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করা। বিশেষ করে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব অপরিসীম।
- দোয়া: প্রতিদিন নির্জনে আল্লাহর কাছে উম্মতের হেদায়েত এবং নিজের মাগফেরাতের জন্য কাকুতি-মিনতি করে দীর্ঘ সময় দোয়া করা।
- খেদমত: সাথী ভাইদের বা মাখলুকের খেদমত করা। এটি মন থেকে অহংকার দূর করে।
- তিন তাসবিহ: সকাল-বিকাল ১০০ বার করে ৩০০ বার তিন তাসবিহ আদায় করা।
- দাওয়াত: জামাতের বাইরেও দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত বা অপরিচিত অন্তত ২৫ জন মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া।